4.5/5 - (4 votes)

আমি রেস্তুরায় বসে শ্রাবণের বৃষ্টি উপভোগ করতে করতে-
ঈষদুষ্ণ চায়ে চুমুক দিতে যাবো।
তখনই হঠাৎ বনমালী সঙ্গে দেখা।
বনমালী!
ও আমার একই ক্লাসের ছোটবেলার বন্ধু,ছোট থেকেই খুব কাছ থেকে দেখে আসছি তাকে।
তার মনের মধ্যে কোনো দ্বিধা নেই,দ্বন্দ্ব নেই।
নেই কোনো অহংকার সরল অংকের মতো সহজ তার মন।
আমাদের প্রায় ১৮ বছর পর দেখা দুজনের চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কত রকম ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেল।
তা বলা বাহুল্য!
সেই স্কুল,সেই ক্লাসরুম,সেই খোলা বারান্দা।
আর ওই হাফ টিফিনের বটতলায় বসে কাটাকুটি খেলা।
মাঝে মাঝে মনে হয় সেই সব কিছুকে কে যেন আমাদের কাছ থেকে দ্বীপান্তর করে দিয়েছে।
সময়ের স্রোতে হারিয়ে গিয়েছে সব।
একদিন বিজ্ঞানের স্যার মৃদুলবাবু পড়া থামিয়ে হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বলেছিল-“তোমরা বড়ো হয়ে কে কি হতে চাও.?”
তখন আমাদের ক্লাসের ফার্স্ট বয় সুরোজ বলেছিল-“আমি বড়ো হয়ে ডাক্তার হবো”।
আরও যারা পড়াশোনায় ভালো ছিল তাদের প্রায় সকলেই বলেছিল মাস্টার, ইঞ্জিনিয়ার আরো কত কি…
আমার আর বনমালী দিকে কারোর কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না।
আমরা তো ক্লাসের লাস্ট এর বেঞ্চের আগে বসতাম।
কারণ ওখান থেকে জানলা দিয়ে পচা ডোবার ওপর পানকৌড়ি আর
শালিকের ভিড় জমতো….
তা দেখতে দেখতেই আমাদের পুরো
ক্লাস কেটে যেত।
যখন মন চাইতো স্কুলের প্রাচীর টপকে আমরা রামুদের বাগানে বসে থাকতাম।
আমাদের দুজনকে বলার মতো তো কেউ ছিল না দুজনই অনেক
ছোটবেলায় মা বাবাকে হারিয়েছি।
অনেক কষ্টে মামা বাড়িতে বেড়ে ওঠা,
দিদা দাদুর মৃত্যুর পর আমি কলকাতাতে ক্লার্ক এর চাকরি পাই সেই সূত্রে কলকাতায় চলে আসি।
আর মামা বাড়িতে যাওয়া হয় না।
বনমালী এখন নলিন গুড়ের ব্যবসা করে থাকা খাওয়ার কোনো কিছু অভাব নেই তার।
সে এই শহরে এসেছে সুরোজের মায়ের ক্যান্সার এর রিপোর্ট আনতে। হ্যাঁ সেই সুরোজ।
যে একসময় ক্লাসের ফাস্ট ছিল,যে ডাক্তার হতে চেয়েছিল।
আমি বনমালী কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম-“তুই এসেছিস!
সুরোজ এলো না কেন.?”
এরপর প্রতুত্তরে বনমালী বলেছিল- সুরোজ এখন দামি শহরের বড়ো নামকরা ডাক্তার হয়েছে।
সে গ্রামের দিকে আর আসে না।
হতভাগা মায়ের খোঁজ নেওয়ার মতো সময় তার হয়না।
এইসব শুনে বৃষ্টিও মনে হয় লজ্জায় মুখ লুকিয়ে নিয়েছে হঠাৎ আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেল সেই সময়-
বনমালী বিরক্তির ভঙ্গীতে চায়ের ভাঁড়টা মাটির দিকে ছুঁড়ে দিয়ে।
আমার পিঠে হাত রেখে হাজার বছরের জমে থাকা দুঃখকে আপোষ করে এক
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছিল-
“ওরা মাস্টার,ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার সবাই সবকিছুই হয়েছে কিন্তু ওরা না মানুষ হতে পারেনি”।

guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments