১.
মৌচাকের মধু স্বাদে মধুময়
কালী নাম জপলে মধুময়।
মৌচাকের মধু পানে শান্তি আসে জঠরে
কালী নাম জপলে শান্তি আসে মনে।
কালী নাম জপলে কালীর আশীর্বাদ পাবি রে।
সূর্য যেমন আলো দেয় বিশ্বকে উজাড় করে
কালীর আশীর্বাদে তেমন ধন্য হবে তোর জীবন রে।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
১৬/১২/২০২৩
২.
কালী মেঘ হয়ে আকাশে ভাসে
পাখি হয়ে আপন সুরে গান বাঁধে
অদ্রি হয়ে মহীর বুকে ঘুমিয়ে থাকে
তবু কেউ পারে না বুঝতে।
কালী নদী হয়ে সায়রে মেশে
অগ্নি হয়ে চিতায় জ্বলে
সর্প হয়ে শিবের গলায় থাকে
তবু কেউ পারে না জানতে।
যা কিছু আমরা দেখি সবকিছু কালী
যা কিছু আমাদের দেখে সবকিছু কালী।
কালী বায়ু হয়ে বিশ্বকে ঘিরে রাখে
মৃত্যু হয়ে প্রাণ নেয় ছিনিয়ে
পাথর হয়ে পথের পাশে রয় পড়ে
তবু কেউ পারে না চিনতে।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
১৫/১২/২০২৩
৩.
আমার সব কাজ হয় ভুল
তোমার নামে ডুবে।
এ কোন ফ্যাসাদে পড়লাম আমি
তোমার প্রেমে পড়ে।
আমি আগুনে দিই হাত নির্ভয়ে
গরল করি পান সানন্দে
এ কী হলো আমার তোমার মায়ায় বিভোর হয়ে?
ঐ অভয় পদের কথা ভেবে ভেবে
যদি মরণও হয় আমার তাও মন্দ নয় সে।
মরণের পরে যেন ঠাঁই পাই ঐ অভয় পদে
অর্ঘ্যদীপের এই বাসনা পূর্ণ কোরো হে দ্বিগ্বসনা।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
৪.
সদানন্দে থাকে মা সদানন্দময়ী কালী
এত রাক্ষস অসুর বধ করেও হাসিমুখে থাকে শশীভালী।
মায়ের রক্তকালো রূপ দেখে
লোকে মনে মনে কত গালি দেয় তাঁকে।
মা মনের কথা বুঝতে পারে
তবু হাসিমুখে থাকে।
শশ্মানে চিতা জ্বলে
তবু মা হাসিমুখে থাকে।
কা’র কখন কী বিপদ আছে
জেনেও হাসিমুখে থাকে।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
৭/১২/২০২৩
৫.
আমি সকল কাজের পাই গো সময়
শুধু মাকে ডাকার বেলায় পাই না।
আমি ভুলে যাই মাকে
তবু মা ভোলে না আমায়।
আমি মা’র থেকে চলে যাই দূরে
তবু মা আমার কাছেই থাকে।
পোড়া নয়ন দুটি পায় না দেখতে
বোঝেনা সবই মায়ের মায়া যে।
তাই তো বলি নিজেকে
বিপদকালে যে বাঁচাবে ডাক তাকে সময় করে
নিদানকালে যে শিয়রের কাছে এসে থাকবে বসে ডাক তাকে সময় করে।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
৬.
মা আমার হীরে মা আমার সোনা
মা আমার মণিমুক্তা।
মা আমার দেহের রক্ত
মা দামী আমার জীবনের থেকেও।
মা আমার বুকের ধন আমার প্রাণবায়ু
মা আমার সাথে কী খেলা করে বোঝে না তো কেউ।
মা আমার আদরের পুতুল
আমার ঘরের ছোট্ট মেয়ে।
চাঁদ সূর্য জ্বলে কীভাবে
মা আমার আলো দেয় বলে।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
৬/১২/২০২৩
৭.
ভক্তি যেন থাকে মা আমার তোমার অভয় চরণে
মুক্তি যেন হয় মা আমার তোমার আশীর্বাদী হাতে।
থাকতে যেন পারি মা তোমায় ছুঁয়ে
অঝোরধারায় কাঁদতে যেন পারি মা তোমায় দেখে।
বাতুল যেন হই মা তোমায় ডেকে
সারিয়ে তুলো না মা ডেকে নিও চিরতরে।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
৬/১২/২০২৩
৮.
তোর তৈরি ফুল দিয়ে তোকে পূজা করি।
তোর তৈরি ধূপদীপ দিয়ে তোকে দেখাই আরতি।।
তুই দিয়েছিস দুঃখ তাই তোর কাছে কাঁদি।
তুই দিয়েছিস অভাব তাই তোকে দূর করতে বলি।।
তুই দিয়েছিস শক্তি তাই জগতে কাজ করি।
তুই দিয়েছিস মন তাই তোকে সেথায় রাখার জন্য বাতুল হয়ে উঠি।।
তুই বানিয়েছিস মাটি তাই দিয়ে তোর মূর্তি গড়ি।
তুই বানিয়েছিস আমায় তাই আমি তোকে ডাকি।।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
৫/১২/২০২৩
৯.
আনন্দময়ী মা
কেন রাখো ছেলেকে নিরানন্দে?
ছেলেকে দুঃখ দিয়ে
থাকতে কি পারো ভালো?
তুমি জগৎ করেছো আলো
তবু কেন ছেলের চোখের কোল কেঁদে হলো কালো?
কবে আঁধার কোলে ডাকবে
দেখবো সেখানে জ্বলে সূর্য চন্দ্র?
আর কাঁদতে পারি না মা গো
কবে আমার চোখের জল এসে মোছাবে?
তোমার প্রতিমাকে তো এতকাল খাইয়ে এলাম
কবে সেই প্রতিমা থেকে বেরিয়ে এসে আমায় খাইয়ে দেবে?
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
৪/১২/২০২৩
১০.
আয় দেখি মা কালী
অনেক জ্বালিয়েছিস আমায়
এবার বন্ধ কর তোর খেলা লুকোচুরি।
তোর ছোট্ট ছেলেটা বুড়ো হয়ে গেছে রে।
তোর তো বয়েস বাড়েনি
সেই ছোট্টটাই আছিস।
তাই বুঝবি কী?
আর কেনো আমায় খেলাস কালী?
এই বয়সে আর পারি না ছুটোছুটি করতে
আয় দেখি তোকে বেঁধে কাছে রাখি।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
৩/১২/২০২৩
১১.
মা কবে তোকে জড়িয়ে ধরবো?
কবে তোর চোখে মুখে হাত বোলাবো?
মা কবে তোর কোলে মাথা রেখে ঘুমোবো?
কবে তোর মুক্ত কেশে জবা ফুলের রশি দিয়ে বিনুনি বাঁধবো?
মা কবে আমার গায়ে মাথায় হাত বোলাবি?
কবে বনফুলের সাজে তোকে সাজাবো?
মা কবে তোর হাত থেকে খাবার খাবো?
কবে তোকে ছুঁয়ে আমি রাধাকে ছোঁবো?
মা কবে আমার সাথে কথা বোলবি?
কবে আমার রক্ত দিয়ে তোর চরণ রাঙিয়ে জীবনের ইতি টানবো?
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
৩/১২/২০২৩
১২.
এ জগতে আমায় কেউ বাসেনা ভালো তুমি ছাড়া
আমায় নিয়ে নাও না তোমার কাছে মা গো
মেটাও আমার জ্বালা।
তাই তো শুধু তোমার কাছে এসে কাঁদি মা
একা কাঁদলে আরও কষ্ট বাড়ে
জানি তুমিও ফ্যালো চোখের জল
তবু আমি পাইনা দেখতে।
জানি তুমি একদিন দেখা দেবে
আমি তোমার পায়ে সঁপব প্রাণ
মিথ্যা হবে না আমার চোখের জল ফেলা
তুমি মাটির হয়েও মাটির নয় যে।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
২১/১১/২০২৩
১৩.
কালী নামের নদীতে আমি
শেষ খেয়া দেবো পাড়ি
শেষে উঠবো যাঁর পদেতে
তিনি মায়ের পতি।
ঘরে র’বে মায়ের প্রতিমাখানি
আমি ছেড়ে যাবো চলি
দেখবে মা আকাশ থেকে
আসছে ছেলে কোলে দোল খেতে।
মায়ের গালে চুমু দেবো
বাবার সাথে খেলা করবো
মা বুকে পিঠে হাত বুলিয়ে দেবে
আকাশের চাঁদকে ছুঁয়ে দেখবো।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
২০/১১/২০২৩
১৪.
তোকে ডেকে যাই দিবানিশি
“মা মা” বলে
তবু তোর দেখা পাই না রে কালী।
তুই দেখা দেবার নয়
‘দুঃখদায়িণী’ বলে ডাকব তাই ভাবি।
তোকে ডেকে ডেকে কন্ঠ হয় ব্যাথা
তবু চোখের জল বলে “ঝরা থামাব না”।
তুই নিজে আনন্দময়ী হয়ে
ছেলেকে রাখিস দুঃখের সাগরে।
তোকে ডেকে ডেকে জ্ঞানশূন্য হয়ে
তোর পদেতে ধরাশায়ী হলে
তবে কি মা দিবি দেখা?
বল মা জবাব দে।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
২০/১১/২০২৩
১৫.
একদিন আমি থাকবো না
তবু তুই থাকবি,
আমার গান করবে লোকে
তোর মুখের দিকে তাকিয়ে।
একদিন আমি অতীত হবো
তবু তুই হবি না,
তুই বর্তমানেও আছিস ভবিষ্যতেও থাকবি
তবু আমি থাকবো না।
একদিন তোকে বলবো না আর দুঃখের কথা
তবু লোকে বলবে,
একদিন তোর চরণে আর জবা দেবো না
তবু লোকে দেবে।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
১৮/১১/২০২৩
১৬.
তোর নামের সাগরে ভাসতে ভালো লাগে মা
ডুবতে লাগে আরও ভালো,
ডুবে যদি আমার মরণ হয়
তোর কাছে চলে যাবো।
সে সাগরে শিব আছে বিষ্ণু আছে
আছে কৃষ্ণ আছে রাধা
আকাশ আছে পাতাল আছে
সারা ব্রহ্মান্ডই ডোবা।
সে সাগরে হরিনাম আছে রাধানাম আছে
আছে রামনাম
তাই তো করি আমি নিশিদিন
মধুর শ্যামানাম।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
১৮/১১/২০২৩
১৭.
তোর প্রতিমা দিয়েছি জলে
আর যে ঘরে থাকতে পারি না,
ক্ষতস্থানে সূঁচ বেঁধার মতো
শূন্য ঘর আমায় ব্যথা দেয় মা।
আমার তো শক্তি নেই
তোর প্রতিমা ধরে রাখার,
তুই যদি আমায় বেঁধে রাখিস সারাক্ষণ
আমার কান্না পুষ্পবৃষ্টি হয়ে ঝরবে তখন।
আবার কবে আসবি মা?
অত দিন গুনতে মন চায় না।
চলে যা না আমায় নিয়ে
শিবলোকে তোর কাছে।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
১৮/১১/২০২৩
১৮.
এতদিন তোকে ডেকে এলাম
তবু দিলি না দেখা।
আজ তোর খাঁড়া দিয়েই নিজেকে শেষ করব
তখন কি এসে আমায় করবি রক্ষা?
এতদিন তোকে ডেকে এলাম
তবু দেখা দিলি না
আমার দুঃখ বুঝলি না।
আজ নিজের জীবন শেষ করার পরে
আমার জন্য কি তোর দুঃখ হবে?
এতদিন তোর চরণ মোছাতাম আমার চোখের জলে
আজ না হয় তোর চরণ রাঙবে আমার রক্তে।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
১৭/১১/২০২৩
সন্ধ্যা, বারুইপুর
১৯.
শুধু তোর মূর্তিকেই দিবারাত্রি জড়িয়ে ধরে থাকি মা
আমার ইচ্ছাপূরণ আর হয় না।
চাই তোর কোলে শিশুর মতো খেলতে।
তোর মূর্তি তো সব জানে
তবু থাকে চুপ করে।
আমায় এত কাঁদিয়ে
তুই কি শান্তিতে থাকতে পারিস রে?
তুই আমায় খুব কষ্ট দিস
এভাবে আর পারি না রে থাকতে
তাই চাই তোর পায়ে মাথা ঠুকেঠুকে নিজের জীবন শেষ করতে।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
২০.
মায়ের কাছে যে যা চায় তাই পায়
শুধু আমিই কিছু চাইতে পারিনি।
মায়ের দেহে কোনো বসন নেই
ঢাকা শুধু মুন্ডমালা জবার মালায়,
তবু মা যে দানের সাগর
কাউকেই খালি হাতে ফেরান না।
আমার তো কোনো চাহিদাই নেই যে কিছু চাইবো
শুধু মাকে কেঁদে কেঁদে বলি,
মা গো আমায় সামনের জনমে জবা করে তোমার চরণে ঠাঁই দিও।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
২১.
শুধু মূর্তি থেকেই দেখে গেলি
একবার কাছে আয় না মা,
যে যা চায় তুই তো তাই পূরণ করিস
তবে কেন আমার বেলায় না?
খুব ইচ্ছা করে তোকে ছুঁয়ে দেখি
একবার কাছে আয় না মা,
ছেলের কষ্ট বুঝিস না
তুই কি তবে পাষাণী হলি?
একবার কাছে আয় না মা
এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দে,
আমি ঘুমিয়ে পড়ব তোর কোলে
আর জাগব না
যাব তোর সাথে চলে।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী