কয়েক ফোঁটা নোনতা জলের বিপরীতে;
যখন বিষাদ সিন্ধু তার জোয়ার ঠেলে দেয়
আরব সাগর পেরিয়ে লোহিত সাগরের
সবচেয়ে দূরবর্তী কোন এক নির্জন তীরে।
সেই তীরে বসে অপ্রকৃতস্থ হাসির অবয়বে
আমি সুন্দর রচনা করি। আমি পাতা উল্টাই,
প্রতিটা পৃষ্ঠায় খুঁজতে থাকি ভিজতে ভিজতে
জমে যাওয়া নদীর গতিপথ।
বেশ কয়েক সহস্র বছর আগে
আমি একবার প্রশ্ন করেছিলাম,
“তবে মানুষ কেন থমকে দাড়ায়, নদীর তীরে এসে”
আমি উত্তর খুঁজে পাই নি।
অষ্টজন্মী মানব জনমের এই সপ্তম অবতার ধারণ করতে;
কত লক্ষ কোটি বার আমায় ফিরে যেতে হয়েছে
আমি তা জানি না। তবুও শোনা হয়নি আমার।
শোনা হয়নি জলের কাঁপন, কান্না কিংবা শীৎকার।
কেবল বেলাভূমিতে দাড়িয়ে আক্ষেপের শুষ্ক কন্ঠে
কিছুটা লালা গিলিয়ে যাওয়া ঢোক;
সঙ্গে ছিদ্র যুক্ত ফুসফুস থেকে বেরিয়ে আসা
পুরনো ব্যাবস্থাপত্রের অভ্যাস মাফিক
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত এক পুরোদস্তুর দীর্ঘশ্বাস।
আমার এজন্মের অভিমান এতোটাই তীব্র হলো যে,
আবার কোন শুভ লগ্নে, সহস্র বার
প্রকৃতিতে ফিরে যাবার পর যদি
মানব রূপে অবতীর্ণ হওয়ার সৌভাগ্য হয়।
হয় যদি তা জন্মাষ্টমীর দিন।
তবুও! আমার অষ্ট জন্মকে
তুচ্ছতাচ্ছিল্যের আবরণে মুড়ে
অস্বীকার করতে কোন কুন্ঠা বোধ করবো না।
বরং তোমাদের বলি…
তোমরা ভাবো নদী বিলীন হয়।
কিংবা স্থানান্তরিত হয় এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।
এটা সত্যি নয়। বরং একজন কবি’র আক্ষেপের
বিকিরণ সহ্য হয় না তার।
প্রকৃতির কান্নাকে তোমরা বলো ঝড়,
কিংবা জলোচ্ছ্বাস। আমি বলি অনুনয়।
একজন কবি’র কাছে একটা নদীর অনুনয়।
একটা স্পর্শের প্রার্থনা। যা না গ্রহন করলে তার মৃত্যু অনিবার্য।
আজ… ঠিক তাই হোক। বিলীন হওয়ার অভিশাপ
রচিত হোক কোন এক ক্ষরস্রোতা নদীর প্রতি।
লুসাই এর কান্না থামুক। সবুজ হয়ে যাক ধুসর;
আর বাতাসের মৌঁ মৌঁ গন্ধ হারিয়ে যাক ধুলো বালির স্তুপে।
কবি আর কোন রাত পূর্ণিমা দেখবো না।
ভাসবে না নদীর বুকে কিংবা
বেয়ে উঠবে না চন্দ্রনাথের পাহাড়।
এ মৃত্যুই হোক শেষ যাত্রার ইতিহাস।
আর কোন যোনী ফিরে না পাক
তার অস্তগামী সূর্যের উষ্ণ তাপ।
অথবা ললাট থেকে কপল বেয়ে
স্তনে নেমে যাওয়া কোন চন্দ্র কিরন।
আর কখনোই নেমে যাওয়া না হোক।
ডুবে যাওয়া না হোক কোন অতল গহব্বরে।
এই অভিশাপ তার চিরস্থায়ী বন্দবস্তে অম্লান থাকুক;
একটা নদীর বুকে, একটা পাহাড়ের চুড়ায়,
একটা সগরের তীরে, সবশেষে একটা নারীর শরীরে।