নগরের শান্ত বারান্দায় বসে তোমার কথা ভাবছি।
তুমি নেই,
নেই আনন্দ অভিসারী দীনহীন ইতিহাস।মনের রক্তে মিশে আছে দৃশ্যমান দৃশ্যের ভাঙ্গাচোরা মুখ।
আমার মুখে হাসি নেই,
শুধু আছে কান্নার প্রবল ছাপ।
নিহিত সুখের আনন্দ তোমার হাতের স্পর্শের সরব সাক্ষী তার।
তুমি ছিলে আমার জীবনে সুখ পাখিটার বন্ধু।
যেই সুখ পাখিটা উড়ে গেল অমনি তুমিও সুখের প্রদ্বীপটা নিভিয়ে দিয়ে সুখ পাখিটার সাথে চলে গেলে।
ক্ষয় হতে হতে প্রতিটা অঙ্গে মরিচা ধরে গিয়েছে। নিশ্বাসটুকু ফেলা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তোমার হাতের স্পর্শের দুর্ভাবনা নিজেকে করি অবহেলা।
নেই কোনো আকাঙ্খা,
মনে হচ্ছে সব কেমন ঘুনে খেয়ে নিয়েছে প্রতিনিয়ত। কাঠের তৈরি বারান্দার ওপাশে প্রতিটা জানালার কপাট বন্ধ।
প্রতিটা বাক্সের ফোলা ফোলা পেট খালি করে সব চলে গিয়েছে ধুলো আর ধোঁয়ার শহর ছেড়ে।
শুন্য বারান্দায় চড়ুই পাখিরা অবিরত কথা বলেই যাচ্ছে।
যেন গাড়ির হর্ন,টিভি আর মানুষের দরাদরি শব্দের অত্যাচারে যা এতকাল মন খুলে কথা বলতে পারে নি।তা এখন বলে নিচ্ছে,
সেই শুন্যস্থান এ একটা কাঠখোট্টা বন্দুক এসে ছোট্ট চড়ুই পাখিদের ধমক দিয়ে যাচ্ছে।
আর দুরে আকাশে দেখা যাচ্ছে মেঘগুলো শুধুই ঘন কালো হয়ে অন্ধকারে ডানা ছড়িয়ে হা পিত্যেশ করা মরুভূমির মর্গজুড়ে নেমেছে।
তোমার কাছ থেকে আমি এবং আমার কাছ থেকে তুমি যেমন দূরে সরে গিয়েছ ঠিক তেমনি আকাশ ও আকাশের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে।
আমাদের মাঝখানের দুরত্ব স্থানগুলো দখল করে নিয়েছে খরা।
তোমার অবহেলায় আমি পুরোপুরি মরে গিয়েছি।শুধু দৈব কঙ্কালটা জেগে আছে আপাতত!
বুকের যে পাজরে তুমি থাকতে ঐ পাজরটা আজও শুন্য কারণ তুমি নেই,
তোমার অবহেলায় আজ আমি মরিচা ধরা দৈব কঙ্কাল।
ভেবেছি আজ নিজের সব কষ্ট নিজের গোপন সুদর্শন ডানাকে এই ছুটিতে রেখে চলে যাব এক দিনের জন্য সমুদ্র ধারে।
বন্ধুদের সাথে গিয়ে খুব একটা নিস্তার পাবো জানি। যাচ্ছি তবে যাই,
পিছনে সবুজ সবুজ গাছপালা আর সারি সারি গ্রাম। বিজন নদীর ওপারে মরাপাতা যুবক দাড়িয়ে আছে চেনা কোনো যুবতীর মুখে থুতু ছুড়বে বলে।
যুবতী দাঁড়িয়ে আছে চেনা কোনো যুবককে ভেলকি দেখাবে বলে।
দৈব কঙ্কালের মরিচা ধরা লোহার জামা খুলে আমি আজ ছুটিতে চলে এসেছি পিছনের কষ্টটাকে আড়াল করতে সমুদ্রের ধারে।।
নৃত্যরত ঢেউয়ের অপেরার সামনে বন্দী সেলফি মুহূর্ত।
সমুদ্রের নোনা জলে ভিজে আমার কাছে খবর আসল বহুদূরের ফেলে আসা শহরের একটা পোড়া চিলেকোঠার শাওয়ারের নিচে রক্তের নোনা সস মেখে পড়ে আছে আমারই লাশ!!
সারি সারি মৃত শুটকি মাছ চোখ খুলে তাকিয়ে আছে সূর্যের দিকে নির্বিকার ভাবে।
আমার হৃৎপিণ্ডটা কেঁটে একটা উৎসাহী আমেজে অণুবীক্ষণিক ক্যামেরা ঢুকে যাচ্ছে গভীর থেকে আরও গভীরে।
যেখানে জীবনের সব অনুভূতির জল রঙ শুকিয়ে নির্বিকার ভাবে আছে একটা জ্যান্ত মাছ।
আমার থেকে আমি অনেক দুরে সরে গিয়েছি বলে আমি বিষ্ময়কর কিছু মনের মাঝে তুলে ধরছি।
সমুদ্রের একপাশে ঘুঙ্গুর হাতে মেয়েটি নাচবে এই দৃশ্য দেখব আমি হতাশায় তাকিয়ে আছি।
আহা,কি নরম রোদের দিন,
হাওয়ায় জীবন,
এমনো দিন প্রতিদিন হলেই তো একা কাটিয়ে দেয়া যায় বেশ!!
একে একে সমুদ্রে ভেসে উঠি আমরা।
আর দূর থেকে ভেসে আসে বানিজ্যবহরের ডাক।তাদের জাহাজ ভর্তি রসদ তাদের পিপে বোঝাই পাখির পালক মদ ও মধুর বদলে সব অক্ষর ভর্তি পৃষ্ঠা।
ও প্রিয় তুমি নেই বলে এ ভ্রমণে মনটা কেমন করছে তোমার ঐ শহরে ফেলে আসায় নিজেকে কঠিন থেকে কঠিনতর মনে হচ্ছে।
যে শহরে তুমি নেই,
সে শহরে আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে ব্যর্থ প্রেমিকরা।
জীবনের সব লেনদেন মেটাতে যাদের আর ঘরে ফেরা হয় নি!
সে শহরে প্রলয়ঙ্করী ঝড়ে ছাড়খাড় হয়ে গেছে। আগন্তুক আমি বারবার উপেক্ষিত হতে চেয়েছি অথবা ফিরিয়ে দিয়েছি উপেক্ষারত প্রেমিকদের।
কেননা ভুল গল্পের সমাপ্তি টানতে আমি পারিনা।কোথায় যেন সুতোয় টান পড়ে।অবশেষে আক্ষেপ থেকে যায় মৌনতায়।
তুমিহীন শহরে নিঃসঙ্গ কপোতরের মতো ঘুরে বেড়াতে এখন আমার তেমন একলা লাগে না।
কাক,কোকিল, শকুন আর সমুদ্রকে বিলিয়ে দিয়েছি তোমার অবহেলার কথা।।
যে শহরে তুমি নেই,,
সেই শহরে আমাকে চিনিয়েছে অমানিশা।
ভালো থাকার বায়নাগুলো এতদিন সেফটিপিন দিয়ে আটকানো ছিলো।
আজ তা খুলে দিলাম,
কিন্তু তবুও কোথায় যেন আধটুকু আবেগ ঝুলে পড়ে আছে। এখনো পুরোপুরি মরে নি।
আমার কি কোথায় কোনো ভুল ছিল??
আমি কি স্বপ্ন দেখাতে বা দেখতে ভুল করেছিলাম!? তবে কি আমি ভুল সিদ্ধান্তে ছুটে চলেছিলাম দিগন্তের মরিচীকায়!!
বাম ডানের পার্থক্য না বুঝে।
এই সব চিন্তা করতে করতে আজ ২ মাস হয়ে গেল। আমি ক্লান্ত!
হ্যাঁ আমি পুরোপুরি ক্লান্ত!!
ব্যথিত ভুল নিয়ে শরীর যেখানে যায় চিন্তাগুলোও সেখানে যায়।
বিকেল শেষ হতে হতে রওনা দিলাম আবার তোমার আমার শহরে।
যতই হোক মায়া টা যে সেখানেই পরে আছে।
অন্ধকার রাত্রিতে বাসের ছিটে বসে আর কতটুকুই বা আকাশটা দেখা যায়,
জানালার মোটা গ্লাস খুলে অন্ধকার আকাশ নীল নিঃশব্দে তারা গুলমের ফাঁকে ফাঁকে নিজেকে গোপন করছি অপার রহস্যে।
কেউ কি আছো?
এর কোথাও কোনো গোপন বেদনায় মনে মনে ভাবি শুন্য শুন্য থেকে শুন্যেরই সৃষ্টি।।
নাকি কেউ আড়াল করে এমনি ভাবে ফুটিয়ে নিয়েছে নিজেকে দূরে, জোত্যিমর্তায়,, আলো অন্ধকারে।
জানিনা ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল আবারও তোমাকে।
তুমি কি কখনো একা হয়েছো?
একা হতে গেলে কতটা অন্ধকার প্রয়োজন ইতিমধ্যে তুমি কি জেনেছো?
অবরুদ্ধ মনমরায় তুমি রাত জেগে বেদনায় নীল হয়ে ঝেরে ফেলে দিতে চেয়েছিলে সব স্মৃতি।
নিরীহ ঘুমের ভিতরে আমাকে খুজছো?তুমি প্রকাশ না করলেও আমি জানি।
চোখের ভিতর নাকি মনের খবর ছটফটায়!
তাহলে রুদ্ধ আবেগে তুমি বসে কেনো কাঁদো?
তুমি আজ আলোহীন অন্ধকার বয়ে বেড়াবার ভার নিয়েছো!
ভালোবেসে অন্ধকার জমাট আধারে ভাষা শিখেছো হয়তো ভুলে গিয়েছো ভালোবাসতে।