তারপর, তারপর দুই যুগ পেরিয়ে গেলো।
তোমার সাথে যোগাযোগ নেই সব বিচ্ছিন্ন।
টেবিলের উপর রাখা বার্ধক্যের ঔষধ
তিনবেলা খেতে ভুলে যাই।
তবুও নিয়ম করে তিনবেলা
পুরোনো এ্যালবামে তোমাকে দেখতে ভুলে যাই না।
একটা রাস্তা ধরে দুজন গন্তব্যহীন হাঁটা,
পার্কে বসে সোনালী সন্ধ্যা দেখা
কিংবা কিশোর শফিকের দোকানে এক কোণায়
বসে ফুস্কা হাতে রাজ্যির কথা হয় না অনেক দিন।
এই কোণায় এখন অন্য কেউ বসে, আমরা না।
দোকানের আয়তন বেড়েছে, রমরমা ব্যবসা তার।
কিশোর শফিকের আজ তিন ছেলের সংসার!
জানো, আমার সাথে দেখা হলে ছেলেটা
এখনো তোমার কথা বলে।তার চোখ ভরে যায় জলে।
আমরা নাকি ওর কী উপকার করেছিলাম,
ওসব মনে নেই আমার। মনে করতে পারি না, তোমাকে ছাড়া।
বয়স বাড়ছে দিনদিন , স্মৃতি যোগবিয়োগ হচ্ছে।
যোগবিয়োগে তুমি নেই। হিসেব কষে বের করি না তোমায়।
হিসাবনিকাশে আমি খুবই দূর্বল,এর থেকে বেশি তোমার উপর।
দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস
ক্যালেন্ডারের পর ক্যালেন্ডার চলে যাচ্ছে একেরপর এক।
সবকিছু পরিবর্তন হচ্ছে খুব দ্রুত, তোমার প্রতি আমার
নিখাদ ভালোবাসার একটুও নড়চড় নেই।
সেই কবে সন্ধ্যার মুখে, ঠুকনো মান-অভিমান
ছিলো দুজনের ছোট্ট ঘরে। এখন আর নেই।
তোমার কবরের সাথে সাথে এগুলোরও
কবর হয়ে গেছে! আর আমায় রেখে অর্ধমৃত।
আমার কালো ঝকঝকে চুলে পাঁকা ধরেছে, বুক পশমেও।
চামড়া কুঁচকে যাচ্ছে, একটু একটু কুঁজো হয়ে যাচ্ছি।
নিয়ম করে তিনবেলা ঔষধের বোতলে, ক্যাপসুলে
ভালোবাসা গুলিয়ে তোমাকে খাচ্ছি।
তারপর, তারপর আমিও চলে যাবো দিন ফুরিয়ে গেলে,
সবকিছুর কবর হবে আমার সঙ্গে করে।
বেলা শেষ, ঊনষাটের কৌটায় আরো একটা দিন।
টেবিলে অর্থহীন অসুখের সব ঔষধ ইতি টানবে,
তোমাকে হারানোর যন্ত্রণা গুছে যাবে, অসুখটাও
সেরে যাবে বেলা শেষের দিকে।
2021-10-25