সময়ের নশ্বর মানুষ!
তুমি কি বুঝো-
তুমি কি জানো-
তুমি কি শুনেছো-
কোথায় আমাকে চাপা দেওয়া হয়েছে?
-‘কবরের মাটিতে না,
কবিতার মতো হৃদয়েও না।
প্রেমিকার তাচ্ছিল্যে না,
মায়ের অভিশাপেও না।
অসহায় মৃত্যু যন্ত্রণায় না,
এটিএম বুথের ভিতরেও না।’
আসলে আমি আমার-
মনুষ্য অভ্যাস-অস্তিত্ব-অনুভূতির কাছে চাপা পড়েছি,
বলতে গেলে আমি নিজের ভেতরেই চাপা পড়েছি।
অর্থাৎ আমি এখান থেকে বেরুতে পারবো না,
বা বেরিয়ে কোথাও চলে যেতে পারবো না।
তো আমি রয়ে গেলাম আমার ভিতরে,
আমার এই মাংশলদেহের গারদে,
চামড়া-ত্বক সেখানের লৌহ-গরাদ,
চোখ-ইন্দ্রয় সেখানের ছোট্ট জানালা,
আর আমি সেই গলিত-পচান কয়েদি,
কোনো দোষ ছাড়াই যেই কয়েদির কায়েদবাস।
বিচারক অন্তরদেব, ঘোষণা দিলেন,
‘তোর দোষ ছিল, তুই প্রজাপতি ভয় পেতি,
অর্থাৎ তুই প্রজাপতি ঘৃণা করতি।’
-‘আমি ভয় পেতাম ঠিকই, কিন্তু ঘৃণা না, দেব!
এখন অনেক মানুষই তো নরদানব হয়, ঘৃণ্য হয়,
কিন্তু আবার অনেকেই তো নরদেব হয়, ঘৃণ্য নয়।
কিন্তু দুজনকেই তো আমরা ভয় পাই, দেব!’
তো আমার দোষ হয়ে গেলো,
মানুষকে নরদানব দেবার অভিযোগ।
সেই দিন আমি বুঝলাম,
মানুষ দেবতা কিনে ফেলেছে,
হয়তো দানবও কিনে ফেলেছে যা।
কিন্তু আমি জানি,
মানুষ এখনো মানুষ কিনতে পারেনি।
তো এখনো কেও আমাকে কিনতে পারেনি,
বা অন্যভাবে বললে কেও কিনেনি।
নরদানব ও নরদেব এখন আর দুটো ভিন্ন সত্তা নয়,
বস্তুত দুটোই নরদানব।
মিষ্টি রূপ বা মিথ্যা রূপ- নরদেব,
তিক্ত রূপ বা সত্য রূপ- নরদানব।
যেহেতু এখনো আমাকে কেনা হয়নি,
তাই আমি সত্যকেই ভালোবাসি।
যা বলছিলাম, কেও আমায় কিনেনি,
আসলে কেই বা কিনবে?
কবিতা তো এখন মূর্খের বিষয়, পরিহাসের বিষয়,
এসব যারা পাঠ করে, তাঁরা অবশ্যই অবুঝ।
অবশ্যই এত নিয়ম-নীতি তাঁদের বোঝার কথা নয়,
অবশ্যই এত জ্ঞান-রীতি তাঁদের বোঝার কথা নয়।
তাই এসব নিশ্চল মানুষকে তারা কেও কিনেনি।
আবার হতেই পারে,
মানুষ মুখোশে তাঁরা মেকি শয়তান, মিথ্যায় সত্য।
আবার হতেই পারে,
তাঁরা আদিম নরধর্ম, তাদের সৃষ্ট নরত্বের মোচনা।
এতসব চিন্তা-কল্পনা করে, গ্লানি-বিভ্রান্তিতে পড়ে,
তারা আর কেনেনি এই মানুষদের।
সুতরাং, শিক্ষা এই যে-
প্রজাপতি শুধুমাত্র কোনো রঙিন পতঙ্গ না,
প্রজাপতি হচ্ছে ঈশ্বর, কিবা ব্রহ্মা,
একে ভয় পাওয়া নিষিদ্ধ,
ঈশ্বরকে ভয় পাওয়া নিষিদ্ধ,
মানুষকে ভয় পাওয়া নিষিদ্ধ।
নয়তো হবে নিজের ভেতর কারাবাস;
নয়তো হবে নিজের ভেতর যন্ত্রনা,
আয়নাগার বলা যায় যাকে,
প্রতিবিম্বে কেবল নিজের খন্ডিত অন্তর,
প্রতিবিম্বে কেবল নিজের বিতৃষ্ণার গহ্বর।
তাই আজ থেকে,
আমি প্রজাপতিকে আর ভয় পাবো না।
প্রজাপতিকে ভালোবাসবো,
হাতে নিয়ে আদর করার সময়ে ডলে দিবো,
কিবা রঙিন পাখাকে পূজো করার জন্য ছিঁড়ে নিবো।
পুঞ্জাক্ষী নিদর্শন হিসেবে জাদুঘরে রেখে দিবো,
কিবা হত্যা করে তাদের ফেরার অপেক্ষায় থাকবো।
কারণ প্রজাপতি তো অনশ্বর!
কারণ প্রজাপতি তো ঈশ্বর!
সবশেষে চিৎকারে বলি,
কারাবাস দীর্ঘতর হোক!
প্রজাপতি উচ্চতর হোক!
নর-মানুষ নিম্নতর হোক!